olpokotha. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Followers

বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

পশম-উৎসবের আমন্ত্রণলিপি

পশমে ভরে যাচ্ছে চারপাশ, হাওয়ায়-হাওয়ায়
বাজছে পশমের রণদামামা, পশম তুমি কোথায়?
পশমের নামে ঝ’রে যাচ্ছে অজস্র বাদামপাতা
শান-বাঁধা পথের ওপর টুপটাপ শব্দের মঞ্জুরি।
শীতার্ত এই রাতে পশম তুমি আমাকে তোমার
নাগালে রেখো; ওই তো দূরে কোথাও শুনতে পাচ্ছি
ক্রমাগত একনাগাড়ে ডেকে চলেছে হাঁসেরা_
বাবুদের বাগানের ঝিলে, আমি বাইরে বেরুতে
পারছি না কতোদিন_ আমাকে তুমি নিয়ে চলো পশম,
আমার এক পাটি চটি হারিয়ে গেছে কোথায় যেন
আমি খুঁজেছি তাকে আঁতিপাঁতি সারা রাতভর
শিশির জড়ানো তৃণদলে, নালি ঘাসের সবুজ অরণ্যে
কুড়িয়ে পেয়েছি টিকিটবিহীন শাদা খাম
রাতদুপুরে তাই ছুটে গেছি বুড়ো দর্জির তাঁতকলে
অনেক যত্নে রঙিন সুতোয় নকশা বুনে লিখে দিলো
পশমের ঠিকানা, পশম-অন্ত-প্রাণে আমি শুনেছি
হাওয়ায়-হাওয়ায় বাজছে পশমের রণদামামা_
গ্রামোফোনের গানের আড়ালে পশম তুমি কোথায়?
বাবুদের বাগানে আজ শুধু পশমের গান
রঙিন পাতলা কাগজের হ্যান্ডবিল উড়ছে খালি
ঝ’রে-পড়া পাতার ফাঁকে-ফাঁকে নড়াচড়া করছে ফর্ফর
পশম আসছে আমাদের পশম-উৎসবে আজ।

নারীর অস্ত্র

বিশ্বাসকে হতে দাও আমার ঢাল
আনন্দকে আমার তুখোড় যুদ্ধাশ্ব
ভয়ঙ্কর অই দানবটির
নিদারুণ ক্রোধের
প্রচণ্ড গৃধ্নুতা ও লোভের
হাত হতে
আমাকে মুক্ত হতে দাও
অন্ধকারের দুর্গ থেকে
আমার যৌবনের তরবারি দিয়ে
এ-ফোঁড় ও-ফোঁড়
সদা সত্যের সামর্থ্য, তেজ
আর শক্তিশালী পরাক্রমে।

ঋতুর প্রহারেও ঋজু উন্নত শির

রতনপুর কত দূর মাইলের দূরত্ব দিয়ে
না মেপে নদীমাতৃক বাংলাদেশের
৬৮ হাজার গ্রামের নিভৃত কোণের
একটি ধরে নেয়াই ভালো_
একাত্তরে, সেখানে হানাদার পাকিস্তানী
বাহিনীরও হিম্মতে কুলোয় নি,
এমনই প্রত্যন্ত এক অঞ্চল,
অথচ সেখানেই আজ থেকে কমের ভেতর
বছর শ’দুই আগে ছিল
আমার নিজেরই শিকড় বা উৎস
যাই বলা যাক; আজ এত এত বছরের
ব্যবধানে দাঁড়িয়ে কি দেখা গেল ঃ
পাঁচ প্রজন্মের দূরত্বের দাঁড়ানো বংশধারার
পথ পরিক্রমা শেষে কার্তিকের
শেষাশেষি হেমন্তের মাঝামাঝি
দাঁড়িয়ে রয়েছে রতনপুরের দিক নির্ণয়কারী
এক দীর্ঘকায় তাল গাছ যাকে ঘিরে কত না ঋতুর
প্রহার যার মাঝে পাঁচ পাঁচ প্রজন্মের
এই যে দেখা তাও কার্তিকের নবান্নের দেশ
কুয়াশা আর শিশির জড়ানো হেমন্তের
তুমি আরও দীর্ঘজীবী হও এই ছিল প্রার্থনা
এই গ্রামের এক নগণ্য উত্তর পুরুষের পিচ্ছিল মাটিতে দাঁড়িয়ে।

দুর্দিন চিরকাল থাকে না

যখন দুর্দিন ঘনিয়ে আসে
তখন মাথা ঠান্ডা রাখাই সবচেয়ে জরুরী কাজ।

যাঁদের মুখে সব সময় কথার খই ফোটে
তাঁদের দরকার তখন কিছুদিনের জন্যে বাক্‌সংযম অভ্যাস করা।

দুর্দিন আসছে, এই খবরটুকু যাঁদের কানে পৌঁছে দেওয়ার মানুষ ছিল না,
তাঁরা কবি, অধ্যাপক, রাজনীতির পন্ডিত অথবা নেতা যা-ই হোন না কেন,
তাঁদের উচিত এখনও কিছুদিন নিজেদের ভাবনাগুলিকে যাচাই
করে নেওয়া।

দুর্দিন কখনও চিরকাল থাকে না,
এ কথাটাও আমাদের সমানভাবে মনে রাখা দরকার।
নইলে সামনের অন্ধকার আমাদের ঘাড়ে এমনভাবে চেপে বসবে
যাতে রাস্তা হাঁটাই হবে কঠিন থেকে কঠিনতর সমস্যা।

দুর্দিনে আমরা নিশ্চয় যে-যার ঘরে ব'সে থাকবো না
শুভ ও অশুভের লড়াইয়ে তখনও আমাদের কাজ থেকেই যাবে!
কেউ কেউ আমাদের ছেড়ে চ'লে যাবেন, ভিন্ন আদর্শের কথা ব'লে;
অথবা নীরবে -- যাঁর যেমন রুচি ও অভ্যাস!

আর তখনই আমরা পৃথিবীকে আরেকটু বে'শি ক'রে চিনতে পারবো;
বুঝতে পারবো, কোথায় আমাদের সত্যিকারের শক্তি,
আর কোথায় আমাদের দুর্বলতা।
 
(৩০ ডিসেমবর, ১৯৮৪)

Text Widget

Text Widget